হেলিকপ্টার কিভাবে বানায়
একটি হেলিকপ্টার তৈরি করার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং বিভিন্ন ধাপে বিভক্ত। এর জন্য উঁচু প্রযুক্তি, প্রকৌশল জ্ঞান, এবং উচ্চমানের উপকরণের প্রয়োজন হয়। সাধারণত, হেলিকপ্টার তৈরির ধাপগুলো নিম্নরূপ:
আরো পরুন ……
সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের তালিকা |
পরিকল্পনা এবং ডিজাইন:
হেলিকপ্টারের প্রথম ধাপ হচ্ছে পরিকল্পনা ও নকশা তৈরি করা। এর মধ্যে থাকে হেলিকপ্টারের আকার, ওজন, ক্ষমতা, ওড়ার ক্ষমতা, যন্ত্রাংশের ধরন ইত্যাদি। কম্পিউটার-সহায়িত নকশা (CAD) সফটওয়্যার ব্যবহার করে এর ডিজাইন তৈরি করা হয়।হেলিকপ্টার কিভাবে বানায়
উপকরণ নির্বাচন:
হেলিকপ্টারের জন্য সাধারণত লাইটওয়েট উপকরণ ব্যবহার করা হয়, যেমন অ্যালুমিনিয়াম, টাইটেনিয়াম, কার্বন ফাইবার ইত্যাদি, যা শক্তিশালী এবং টেকসই কিন্তু ওজনে হালকা।হেলিকপ্টার কিভাবে বানায়
ইঞ্জিন এবং রোটর সিস্টেম:
হেলিকপ্টারের প্রধান অংশ হলো ইঞ্জিন এবং রোটর সিস্টেম। রোটর ব্লেডগুলো ঘোরানোর জন্য শক্তিশালী ইঞ্জিন প্রয়োজন, যা হেলিকপ্টারকে উপরে উঠাতে এবং বিভিন্ন দিকে নাড়াতে সাহায্য করে। প্রধান রোটর উপরের দিকে টান তৈরি করে, আর টেইল রোটর হেলিকপ্টারকে সঠিকভাবে স্থিতিশীল রাখে।হেলিকপ্টার কিভাবে বানায়
আরো পরুন ……
বাড়ির আশেপাশে থাকা wifi password পাসওয়ার্ড ছাড়া ওয়াইফাই কানেক্ট |
কাঠামো তৈরি:
হেলিকপ্টারের মূল কাঠামো তৈরি করা হয়, যেখানে রোটর এবং ইঞ্জিন বসানো হবে। কাঠামোতে যাত্রী বসার জায়গা, যন্ত্রপাতির স্থান, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ অন্তর্ভুক্ত থাকে। এর পরে, ইঞ্জিন এবং রোটর সিস্টেম যুক্ত করা হয়।হেলিকপ্টার কিভাবে বানায়
ককপিট এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা:
হেলিকপ্টারের পাইলট ককপিটের ভিতর থেকে নিয়ন্ত্রণ করে। ককপিটে থাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন লিভার, বোতাম, এবং গেজ, যা পাইলটকে হেলিকপ্টারের উচ্চতা, গতি এবং দিক নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশও বসানো হয়, যেমন ন্যাভিগেশন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা।
উপাদান ও অংশ সংগ্রহ (Materials & Components):
নকশা সম্পন্ন হলে, হেলিকপ্টার তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করতে হয়। প্রধান উপাদানগুলো হলো:
- ফ্রেম বা বডি: হালকা ও শক্তিশালী উপাদান যেমন অ্যালুমিনিয়াম বা কার্বন ফাইবার।
- রোটর ব্লেড: মূলত কম্পোজিট মেটেরিয়াল থেকে তৈরি।
- ইঞ্জিন: টার্বাইন ইঞ্জিন বা পিস্টন ইঞ্জিন, যা হেলিকপ্টারকে উড়তে সহায়তা করে।
- গিয়ার বক্স ও ট্রান্সমিশন: ইঞ্জিন থেকে শক্তি রোটর ব্লেডে পৌঁছাতে সহায়ক।
- ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম: এটি পাইলটকে উড্ডয়ন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
আপনি ওয়েব সিরিজ দেখতে পছন্দ করেন তাহলে নিচের পোষ্ট গুলো আপনার জন্য
সিস্টেম ইনস্টলেশন (System Installation):
এই ধাপে বৈদ্যুতিক, হাইড্রলিক, এবং ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম ইনস্টল করা হয়। এটি হেলিকপ্টারকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করে।হেলিকপ্টার কিভাবে বানায়
সার্টিফিকেশন ও ফাইনাল টাচ (Certification & Final Touch):
পরীক্ষার পর, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে হেলিকপ্টারটির ফ্লাইট সার্টিফিকেশন নিতে হয়। এর পরে, ফাইনাল টাচ দেওয়া হয় এবং হেলিকপ্টারটি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হয়।হেলিকপ্টার কিভাবে বানায়
প্রযুক্তিগত বিবেচনা:
- এয়ারোডাইনামিক ডিজাইন: এটি হেলিকপ্টারের কর্মক্ষমতা ও স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলে।
- রোটর সিস্টেম: প্রাথমিক রোটর ও টেইল রোটর উড্ডয়ন ও নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- কন্ট্রোল সিস্টেম: পাইলটের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে উড়ার সময় স্ট্যাবিলিটি ও পরিচালনা নিশ্চিত করে
পরীক্ষামূলক ফ্লাইট:
সবকিছু ঠিকঠাক বসানোর পর হেলিকপ্টারের পরীক্ষামূলক ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। এই সময়ে দেখা হয় হেলিকপ্টার ঠিকভাবে উড়ছে কিনা, সব নিয়ন্ত্রণ সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, এবং নিরাপত্তা মান বজায় রাখা হচ্ছে কিনা।
নিরাপত্তা এবং মান যাচাই:
পরীক্ষার পর, হেলিকপ্টারটি নিরাপত্তা মানদণ্ড অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়। এটি নিশ্চিত করা হয় যে এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা এবং নিরাপদে ব্যবহারযোগ্য কিনা।হেলিকপ্টার কিভাবে বানায়
এই প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সম্পাদিত হয়, এবং একটি হেলিকপ্টার তৈরি করতে অনেক সময়, অর্থ, এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজন হয়।হেলিকপ্টার কিভাবে বানায়
হেলিকপ্টার কিসে চলে
হেলিকপ্টার সাধারণত দুটি প্রধান উপায়ে চলে:
- ইঞ্জিনের শক্তি: বেশিরভাগ আধুনিক হেলিকপ্টার গ্যাস টার্বাইন ইঞ্জিন ব্যবহার করে। এই ইঞ্জিনে জ্বালানি (সাধারণত এভিয়েশন ফুয়েল) পুড়ে শক্তি উৎপন্ন হয়, যা প্রপেলার বা রোটর ব্লেড ঘুরিয়ে হেলিকপ্টারকে উপরে ওঠার এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা দেয়।হেলিকপ্টার কিভাবে বানায়
- রোটর সিস্টেম: হেলিকপ্টারের প্রধান অংশ হলো এর রোটর সিস্টেম। রোটর ব্লেডগুলি দ্রুত ঘুরে বাতাসের চাপ তৈরি করে, যা হেলিকপ্টারকে উড্ডয়ন করতে এবং মাটি থেকে ওপরে উঠতে সাহায্য করে। এছাড়াও, হেলিকপ্টারের লেজের রোটর (টেইল রোটর) ঘুরে হেলিকপ্টারের দিক পরিবর্তনে সহায়ক হয়।হেলিকপ্টার কিভাবে বানায়
এই দুটি মূল উপাদানই হেলিকপ্টারকে পরিচালনা করতে সাহায্য করে।
হেলিকপ্টার কিভাবে আকাশে উড়ে
হেলিকপ্টার আকাশে উড়তে পারে মূলত এর ঘূর্ণায়মান ব্লেডের (রোটর) সাহায্যে। হেলিকপ্টারের উপরের বড় রোটর ব্লেডগুলি ঘোরার ফলে লিফট বা উত্থানের শক্তি তৈরি হয়, যা হেলিকপ্টারকে উড়তে সাহায্য করে। এটি কয়েকটি ধাপে কাজ করে:
- রোটর ব্লেডের ঘূর্ণন: হেলিকপ্টারের উপরের রোটর ব্লেডগুলি দ্রুত ঘোরে। যখন ব্লেডগুলি ঘোরে, তখন তা বাতাসের নিচে চাপ সৃষ্টি করে এবং উপরে লিফট তৈরি করে, যা হেলিকপ্টারকে মাটির উপরে তোলার জন্য যথেষ্ট শক্তি দেয়।হেলিকপ্টার কিভাবে বানায়
- লিফট তৈরি: রোটর ব্লেডগুলি একটি নির্দিষ্ট আকারে তৈরি করা হয় যা “এরোফয়েল” নামে পরিচিত। এর ফলে যখন বাতাস রোটরের উপর দিয়ে যায়, তখন ব্লেডের উপরে ও নিচে বায়ুর গতি আলাদা হয়ে যায়। এই গতি পরিবর্তনের ফলে নিচের দিকে চাপ এবং উপরের দিকে লিফট তৈরি হয়, যা হেলিকপ্টারকে উপরে উঠতে সাহায্য করে।হেলিকপ্টার কিভাবে বানায়
- রোটরের কোণ নিয়ন্ত্রণ: হেলিকপ্টারের পাইলট রোটর ব্লেডের কোণ পরিবর্তন করতে পারে, যাকে “পিচ অ্যাঙ্গেল” বলে। পাইলট পিচ অ্যাঙ্গেল বাড়িয়ে বা কমিয়ে লিফটের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হেলিকপ্টার উপরে উঠতে, নিচে নামতে বা সামনে-পিছনে চলতে পারে।
- পুচ্ছ রোটর: হেলিকপ্টারের পিছনে একটি ছোট রোটর থাকে, যাকে “টেইল রোটর” বলা হয়। এটি মূল রোটরের বিপরীত ঘূর্ণন শক্তি সামঞ্জস্য করে এবং হেলিকপ্টারকে সোজা রাখে, যাতে এটি ঘুরে না যায়।হেলিকপ্টার কিভাবে বানায়
হেলিকপ্টার কে আবিষ্কার করেন
হেলিকপ্টারের মূল ধারণাটি বিকশিত হয়েছে বিভিন্ন আবিষ্কারক এবং প্রকৌশলীদের মাধ্যমে, তবে আধুনিক হেলিকপ্টারের প্রকৃত আবিষ্কর্তা হিসেবে ইগর সিকোর্স্কি (Igor Sikorsky) সবচেয়ে বেশি পরিচিত। রাশিয়ান-আমেরিকান প্রকৌশলী সিকোর্স্কি ১৯৩৯ সালে সফলভাবে প্রথম ব্যবহারযোগ্য এবং কার্যকরী হেলিকপ্টার, VS-300 তৈরি করেন। যদিও এর আগে কিছু প্রাথমিক ধারণা ও প্রোটোটাইপ ছিল, যেমন লিওনার্দো দা ভিঞ্চির ধারণা বা পল কর্নু’র পরীক্ষামূলক উড়ান, কিন্তু সিকোর্স্কির নকশা প্রথম কার্যকরী হেলিকপ্টার তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।